মোঃ সুজা উদ্দিনঃ
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশত্যাগে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হলো অন্তর্বর্তী সরকার। শপথ নিলেন সকল উপদেষ্টারা।
গণঅভ্যুত্থানের পর এ যেন এক নতুন বাংলাদেশ। দেশের জনগণ সবাই তাকিয়ে আছে উপদেষ্টামণ্ডলীর দিকে, অনেক অনেক জনপ্রত্যাশা।অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে দেশের পুরো সিস্টেমের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার হচ্ছে। সেটা চলমান রয়েছে বটে।
এর’ই মাঝে দেশের তিন দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা চলমান রয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সহ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ জনগণ বন্যার্তদের জন্য আর্থিকভাবে এগিয়ে এসেছেন।
নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে রোডম্যাপ বা রূপরেখা তৈরি করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এদিকে দেশের জাতীয় নির্বাচন এবং বিভিন্ন খাতে সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব ব্যাপক ভিত্তিক সংলাপ চেয়েছে বিএনপি। এই সংলাপ শুরুর ব্যাপারে যাতে ঘোষণা দেওয়া হয় সে ব্যাপারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অনুরোধ করেছে দলটি।
অন্য দিকে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে বিএনপি নির্বাচনের জন্য আলটিমেটাম দিয়েছিল আবার এখন রোডম্যাপ দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছে। পরিপ্রেক্ষিতে আমি মনে করি, বিএনপির জায়গা থেকে যেটি উত্তম মনে করেছে, সেটিই তারা করেছে।
সাড়ে ১৫ বছরে দেশে অনেক জঞ্জাল সৃষ্টি হয়েছে। সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চরমভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে। যার কুফল ১৫ বছরে জাতি ভোগ করেছে। এতগুলো জঞ্জাল ঠিক করা ৩ মাসে সম্ভব হবে না বলে মনে করেন না ডা. শফিকুর রহমান।
বিএনপি নির্বাচনের জন্য তোড়জোড় করছে আমরা এই মুহুর্তে নির্বাচনকে প্রাধান্য দিচ্ছি না। এসময় জাতির ক্রাইসিস রক্তের দাগ, ক্ষতবিক্ষত হওয়া শহিদ পরিবারগুলো, বিভিন্ন জেলায় বন্যার কবলে পড়ে পড়েছে। এটাকে আমরা এই মুহূর্তের রাজনীতি হিসেবে নিয়েছি। এটাকে কেউ যদি রাজনীতি বলে রাজনীতি, আবার কেউ যদি বলে মানবিক দায়িত্ব তাহলে মানবিক দায়িত্ব।
আমরা মনে করি, এ বিষয়গুলো সমাধান না করে নির্বাচনের কথা তোলা, যৌক্তিক মনে করি না। তাই আমরা নির্বাচন নিয়ে কথা বলছি না। মানুষের এ বিষয়গুলো সমাধান করার জন্য আল্লাহ আমাদের যতটুকু সামর্থ্য দিয়েছেন সেটুকু চেষ্টা করে যাব।
নির্বাচনের দাবি করায় জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আসা কটাক্ষ ও সমালোচনার জবাব দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ‘বিরাজনীতিকরণের’ চেষ্টার কথা তুলে ধরেছেন।
এখন নির্বাচনের দাবি জনগণ মেনে নেবে না বলে জামায়াতের পক্ষ থেকে আসা বক্তব্যের বিপরীতে তিনি বলেছেন, যারা ভোটে জিততে পারবে না, সরকার চালাতে পারবে না, তারা এসব কথা বলে।
তবে অন্তর্বর্তী সরকার কবে নির্বাচন দেবে – এই প্রশ্নে এখন বিএনপি ও জামায়াত বিপরীতমুখী অবস্থানে।
আর এদিকে সাধারণ জনগণের মধ্যে দেখা মিলেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার।
অনেকই বলছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হোক নিরপেক্ষ হোক এতে যে কোন দল ক্ষমতায় আসুক জনগন গ্রহণ করে নিবে।
আবার কেউ বলেছেন, ডঃ ইউনুস হলেন বাংলাদেশের মানুষের সুখ পাখি সরকার। পাঁচ বছর এই সুখ পাখি সরকার থাকবেন।
ফেসবুকে একজন বলেছেন, ১৫ বছরে ভোট দিতে পারিনি। প্রয়োজন হলে আরো ১০ বছর ভোট দিবো না। আমাদের এই মুহূর্তে ভোট অধিকারের প্রয়োজন না। আমাদের প্রয়োজন একটা জবাবদিহি মূলক সুশাসন। একটা আত্মনির্ভরশীল সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ।
Leave a Reply