ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিরাময়ের দাবি চীনা চিকিৎসকদের

বিশ্বে প্রথমবারের মতো অভিনব কোষ থেরাপির মাধ্যমে চীনা বিজ্ঞানীরা একজন ডায়াবেটিক রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করেছেন। এই ঘটনাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে যুগান্তকারী সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

চীনের সাংহাই চাংঝেং হাসপাতাল ও চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের অধীনে সেন্টার ফর এক্সেলেন্স ইন মলিকিউলার সেল সায়েন্সের একদল বিজ্ঞানী নতুন এ পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এর বিস্তারিত গত ৩০ এপ্রিল সেল ডিসকভারি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

এ বিষয়ে কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলুলার এবং শারীরবৃত্তীয় বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক টিমোথি কিফার বলেন, আমি মনে করি এই গবেষণাটি ডায়াবেটিসের জন্য সেল থেরাপির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির প্রতিনিধিত্ব করে।

ডায়াবেটিস এমন একটি দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক অসুস্থতা, যা সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। এ রোগে বিশ্বে প্রতিবছর ১০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। শরীর যখন রক্তের সব গ্লুকোজকে ভাঙতে ব্যর্থ হয়, তখনই ডায়াবেটিস হয়। এই রোগ জটিল অবস্থায় পৌঁছালে মানুষের হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে। এ ছাড়া ডায়াবেটিসের কারণে মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং বিকল হয়ে যেতে পারে কিডনিও। নতুন এই গবেষণা বলা হচ্ছে, ওষুধ এবং ইনসুলিন ছাড়াই টাইপ টু ডায়াবেটিস থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যদিও এটি নিয়ে আরো বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন।

১৯৮০ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা ১১ কোটি থেকে বেড়ে ৪২ কোটি ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ মানুষ টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ডায়াবেটিসকে মহামারি হিসেবে উল্লেখ করা হলেও এ রোগ থেকে পরিত্রাণের কার্যক্রম খুব সীমিত। এতদিন নিরাময় অযোগ্য এই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা পরিবর্তনের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন বিশেষজ্ঞরা।

৫৯ বছর বয়সী এক ব্যক্তি ২৫ বছর ধরে টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি এই রোগের কারণে জটিলতার গুরুতর ঝুঁকিতে ছিলেন। ২০১৭ সালে তার একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তার বেশিরভাগ অগ্ন্যাশয়ের আইলেটের কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিলেন যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিদিন একাধিক ইনসুলিন ইনজেকশনের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল ছিলেন তিনি।

সাংহাই চাংজেং হাসপাতালের একজন শীর্ষস্থানীয় গবেষক ইয়িন হাও চলতি মাসের শুরুর দিকে সাংহাইভিত্তিক নিউজ আউটলেট দ্য পেপারকে বলেন, ওই ব্যক্তি গুরুতর ডায়াবেটিস জটিলতার ঝুঁকিতে ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, এই রোগী ২০২১ সালের জুলাই মাসে ‘উদ্ভাবনী কোষ প্রতিস্থাপন’ (ইনোভেটিভ সেল ট্রান্সপ্ল্যান্ট) সেবা পেয়েছিলেন। প্রতিস্থাপনের ১১ সপ্তাহ পর ওই ব্যক্তি বাহ্যিকভাবে নেওয়া ইনসুলিন ইঞ্জেকশনের প্রয়োজন থেকে মুক্তি পান। এ সময় রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য মুখে খাওয়ার ওষুধের ডোজও ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা হয়েছিল। এবং এক বছর পরে ওরাল ওষুধও সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলো-আপ পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, ওই রোগীর অগ্ন্যাশয় আইলেটের কার্যক্ষমতা পুরোপুরি ফিরে পেয়েছেন তিনি। ওই রোগী ৩৩ মাসের জন্য সম্পূর্ণরূপে ইনসুলিন নেওয়া বন্ধ রেখেছেন।

অধ্যাপক টিমোথি কিয়েফারের মতে, এই কোষ থেরাপি পদ্ধতি বৃহত্তর গবেষণায় কার্যকর প্রমাণিত হলে এটি রোগীদের দীর্ঘস্থায়ী ওষুধের বোঝা থেকে মুক্ত করতে পারে। এর ফলে মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে এবং চিকিৎসা ব্যয় কমবে।

সূত্র: খবর সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, টাইমস অব ইন্ডিয়া

 

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *